কিছু দীর্ঘশ্বাস জমা হয়ে থাকবে বুকে কিছু অশ্রু থেমে থাকবে চোখের নিকটে ঝরাবে না শিশির
- রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
তোমার দুচোখে এক অস্পষ্ট স্বপ্নের ছায়া,
তুমি ভেসে যাও,
ভেসে ভেসে চিনে নাও দূরবর্তী কূলের ঠিকানা,
অথবা নিজের মুখ দ্যাখো তুমি নিসর্গে,
নির্জন আয়নায়।
কিছু সে চায়নি যেচে, কিছু সে পায়নি, তবু কিছু কিছু না পাওয়া ব্যথা জমেছে সঞ্চয়ে তার,
যে রকম বীজধান তুলে রাখে অভিজ্ঞ কিষান সুদিন অঘ্রানে
জানি চরম সত্যের কাছে নত হতে হয় সবাইকে-
জীবন সুন্দর আকাশ-বাতাস পাহাড়-সমুদ্র সবুজ বনানী ঘেরা প্রকৃতি সুন্দর
আর সবচেয়ে সুন্দর এই বেঁচে থাকা তবুও কি আজীবন বেঁচে থাকা যায়!
তবু পৃথিবীতে রাত নামে নিবিড় তুষারের মতো,
তুমি শুধু উড়ে চলো ক্লান্তিহীন,
তন্দ্রাহীন অন্য এক সকালের দিকে
যে রাত ‘পাশাপশি বসিবার বনলতা সেন’
সে রাত আমার নয়, সে রাত অন্য কারো
কথা ছিলো, আর্য বা মোঘল নয়, এ জমিন অনার্যের হবে।
অথচ এখনো আদিবাসী পিতাদের শৃঙ্খলিত জীবনের ধারাবাহিকতা
কৃষকের রন্ধ্রে রক্তে বুনে যায় বন্দিত্বের বীজ।
মাতৃভূমি-খন্ডিত দেহের ’পরে তার থাবা বসিয়েছে আর্য বণিকের হাত
হাত বাড়ালেই মুঠোহাত বাড়ালেই মুঠো ভরে যায় ঋণে অথচ আমার শস্যের মাঠ ভরা।
রোদ্দুর খুঁজে পাই না কখনো দিনে,
আলোতে ভাসায় রাতের বসুন্ধরা।
সহজে যদিও ভালোবেসে ফেলি সহজে থাকি না কাছে,
পাছে বাঁধা পড়ে যাই।
বিস্মিত তুমি যতোবার টানো বন্ধন-সুতো ধ’রে,
আমি শুধু যাই দূরে।
আমি কবি নই - শব্দ শ্রমিক।
শব্দের লাল হাতুড়ি পেটাই ভুল বোধে ভুল চেতনায়,
হৃদয়ের কালো বেদনায়
রাজনীতিহীন সাহিত্যচর্চা কপটতা ছাড়া আর কী?
বৈশাখি মেঘ ঢেকেছে আকাশ,
পালকের পাখি নীড়ে ফিরে যায়
ভাষাহীন এই নির্বাক চোখ আর কতোদিন?
নীল অভিমান পুড়ে একা আর কতোটা জীবন?
কতোটা জীবন!!
কাপড়ে যেমন রোদের গন্ধ
তেমনি আমারো শরীরে কিছুটা লেগে আছে প্রিয় আগুনের ঘ্রান
বেদনার সুখে
ভালো আছি, ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ
আমি একা
এই ব্রহ্মান্ডের ভেতর একটি বিন্দুর মতো আমি একা
কথা ছিলো, চিল-ডাকা নদীর কিনারে একদিন ফিরে যাবো।
একদিন বট বিরিক্ষির ছায়ার নিচে জড়ো হবে সহজিয়া বাউলেরা,
তাদের মায়াবী আঙুলের টোকা ঢেউ তুলবে একতারায়-
একদিন সুবিনয় এসে জড়িয়ে ধ’রে বোলবে: উদ্ধার পেয়েছি